Friday, August 24, 2018

First class flight, yeh dil maange more!! Bollei holo??

উপেন্দ্র বললো "কি রে , হিন্দু মিল কি তোর না হলেই নয় ?" তা এই মাঝরাতে এই কূট প্রশ্নের জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।  একি ভনিতা! প্রথম বার বিদেশ যাচ্ছি তাও  আবার এই কনকনে ঠান্ডার মাঝে মার্কিন দেশের শিকাগোয়, কোথায় তাই নিয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, আর বলে কিনা হিন্দু মিল। সত্যি বলতে কি হিন্দু মিল বস্তু টা যে কি ভালো করে তাও জানি না। শুনেছি  অফিস থেকে টিকিট করার সময় হিন্দু মিল বলে দেয় আর বঙ্গসন্তান, বিদেশে কি খাওয়া পাওয়া যাবে সেটার চিন্তায় হিন্দু বললে অন্তত ধৰ্ম  নিয়ে টানাটানি পড়বে না সেটাই বাঁচোয়া!

তা যা বলছিলাম, উপেন্দ্র যেটা ববুঝিয়ে বলল, আমরা অনেক আগে এসেছি চেকইন করতে আর ইকোনমি ক্লাস ওভারবুক হয়ে আছে তাই ব্রিটিশ এয়ারলাইন্স আমাদের বলেছে খাওয়া নিয়ে খুনখুঁতুনি না থাকলে নাকি আমাদের আপগ্রেড করে দেবে। আপগ্রেড করলে কি হয়, কিভাবে করে সেসব নিয়ে বিশেষ প্রশ্ন না করে এটুকু শুধু কন্ফার্ম করা গেলো যে গরিব ভারতীয় দের কিছু এক্সট্রা দিতে হবে না ।

যাইহোক তারপর অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা - কি হয় কি হয় ভাব আর কি !! 

তারপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ দুরু দুরু বক্ষে তো প্লেন  উঠতে গেলাম - কিন্ত প্রথমেই চমক!  প্লেন এর গেট দিয়ে উঠে ভালোমানুষের মতো ইকোনমি দিকে চলে যাওয়াই তো আমাদের অভ্যেস  আর তাই করতে যাচ্ছিলাম আনমনে, কিন্ত সুন্দরী এয়ারহোস্টেস একটু নিমকি হাসি দিয়ে বললেন ওপরে যান সেকি রে বাবা? ওপরে যাবো কিরকম? প্লেন তো এখনো মাটিতেই দাঁড়িয়ে আছে, তাহলে? নাকি একেবারেই স্বর্গে যাবার কথা বলছে ? কি এমন দশ করলাম যে অকালে স্বর্গে যেতে হবে? এইসব সাত পাঁচ ভাবছি আর আমার ভ্যাবাচ্যাকা মুখ দেখে ব্যাপারটা উনি খোলসা করলেন, ওপর মানে স্বর্গে নয়, প্লেন এর দোতলায় হলো ফার্স্ট ক্লাস আর বিসনেস ক্লাস আর উনি সেখানেই আমাদের যেতে বলছেন!! কি করে আর বুঝবো ..আদার বেপারী

সত্যি তো আগে দেখি নি .... হরি বলো, দেখি প্লেন এর পেছন দিয়ে দিব্বি স্বর্গে যাবার থুড়ি দোতলায় যাবার সিঁড়ি চলে যাওয়া গেলো দোতলায় সেখানে যেতে আরেকজন এয়ার হোস্টেস বললেন জ্যাকেট টা দিয়ে দিন তা দিলাম - সেটা চলে গেলো একটা স্পেশাল ক্লোজেট তারপর সিট এসে বসলাম - তবে সেটা সিট বলা চলে না, আমার কাছে রাজ্ সিংহাসন বটে পুরো ১৮০ ডিগ্রী ফ্ল্যাট হয়ে যাওয়া সিট যেটা বিছানা হয়ে যায় , স্পেশাল লা কার্ট মেনু, ওয়াইন এর মেনু, কি নেই! তারপর বসলাম আর ভাবছি কখন লজেন্স নিয়ে আসবে আর মনের সুখে লজেন্স নেবো (যারা পুরোনো দিনের ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স চড়েছেন তারা জানেন প্লেন এর সিট বসার পর ট্রে তে করে লজেন্স নিয়ে আসতো আর একটার বেশি নিতে গেলেই ধমক দিতো !!) - কিন্তু কি কপাল , ফার্স্ট ক্লাস এর কি ছিরি কিছুই তো দিলো না !! কিন্তু একটু পরেই সেই চমৎকার, প্রাণ জুড়িয়ে দেওয়া ঘোষণা সামনে টেবিল এর ওপর একটা ট্রে ভর্তি কতরকম এর চকোলেট , লজেন্স, ক্যান্ডি যে রাখা আছে তার কোনো ঠিক নেই - যত খুশি নিয়ে নাও । দুবার বলতে হলো না , চটপট হাত আর মুখের কাজ করে নিলাম। কিছু টা পেটে আর কিছু টা ব্যাগ এ চালানকরা গেলো !

যাইহোক এতো কাণ্ডের পরে প্লেন তো চলতে শুরু করলো আর দোতলা বাসি বলে কিছু আলাদা বেপার টের পেলাম না যেরকম টেক অফ এর সময় পেটের মধ্যে টা একটু ফাঁকা লাগে সেরকম ই লাগলো আরকি !!

তারপর খানিক টা যাবার পরে উশখুশ করছি কখন ভালো মান্দা খাবার আসবে আর না জানি কি সাংঘাতিক খাবার খাওয়াবে । কিন্তু খানিক পরে এয়ার হোস্টেস দেখি খাবার এর বদলে কি একটা কাগজ দিয়ে গেলো। আর সেটা যে কি ভালো করে দেখে খোলসা হল, এটি একটি খাবার এর মেনু কার্ড। তা মাঝ আকাশে মেনু কার্ড কি রকম? রান্না করে এনে দেবে নাকি? তারপর বোঝা গেলো অতটা না হলেও অনেকটা সেরকম ই - ফার্স্ট ক্লাস এ আসলে অনেকটা রেস্তুরাঁ তে যাকে বলে বলে আ লা কার্ট মেনু - মেনু তে থাকা যা কিছু অর্ডার করা যেতে পারে।

সেটা তো বোঝা গেলো কিন্তু সমস্যায় পড়া গেলো ওয়াইন এর মেনু নিয়ে, সেকি সব বিচিত্র আর খটোমটো নাম আর সব পিলে চমকানো বর্ণনা । পাগলা খাবি কি ঝাঁজে মরে যাবি গোছের ব্যাপার আর কি !!!

কিন্তু সেখানে সহায় হলো উপেন্দ্র - বললো নাম দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না কিন্তু খাবই যখন শ্যাম্পেইন খাবো , সেটাই সাধারণত দামি হয়। যুক্তি তা ফেলে দেবার মতো নয়। তাই অর্ডার করা গেলো আর এলো বেশ বাহারি গ্লাস। বেশ একটা রাজা গজা ভাব আর কি। কিন্তু সত্যি বলতে কি খেয়ে খুব একটা সুখ হলো না - কুকুর এর পেটে ঘি কি আর সহ্য হয় ...

যাইহোক পানীয় তে খুব একটা সুবিধে না দেখে আমরা খাবার এর দিকে গেলাম। মেনু দেখে টেখে ল্যাম্ব এর কিছু একটা অর্ডার করেছিলাম মনে পড়ে এখন। ছিল অনেক কিছু কিন্তু চিকেন সবসময় খাই বলে নিলাম না আর বীফ তো নৈব নৈব চ !! খাবার পরে প্লেট টেট নিয়ে গেলো । তারপর ঘুম এর চেষ্টা । আর সত্যি কথা বলতে সেকি কি আরামের ঘুম আজ অবধি প্লেন এ ঘুমাই নি !! পুরো বাড়ির বিছানা মতো টান টান হয়ে শুয়ে (একটা পুজো সংখ্যা হলে ষোলো কলা পূর্ণ হতো) নিটোল একটা ঘুম। উঠলাম যখন নামার সময় হয়ে এসেছে প্রায় । কিন্তু খাওয়া আরও কিছু বাকি ছিল বটে। এবার কতরকম স্নাক্স আবার সেই ওয়াইন সঙ্গে কতরকম জুস কি আর বলবো। কিন্তু সেই আরাম বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না। প্লেন নামতে শুরু করলো আর রাজকীয় আরাম এর ও শেষ হলো। কিন্তু এটা যে কত বড়ো ক্ষতি করলো তা বলার না। ইংরেজি তে যাকে বলে setting the bar so high !!

হিথরো তে নেমে আমাদের আবার প্লেন বদলাতে হবে। আর কলকাতা থেকেই বলে দিয়েছিলো যে হিথরো থেকে শিকাগো ফ্লাইট আমরা মিস করবো কারণ কলকাতা হিথরো ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছিলো। তাই ওখান থেকেই আমাদের আমেরিকান এয়ারলাইন্স এর ফ্লাইট এ চেঞ্জ করে দিয়েছিলো। তাই হিথরো তে নেমে জ্যাকেট হারিয়ে , নতুন এয়ারলাইন্স এ গেট খুঁজতে গিয়ে এনাউন্সমেন্ট শুনে সেই দৌড় কোনোদিন ই ভুলবো না।

তবে সবচেয়ে হতাশ হয়েছিলাম সব কিছু পেরিয়ে মার্কিনি এয়ারলাইন্স এ ইকোনমি ক্লাস এর সিট এ বসে প্রথম বার আমেরিকান খাবার পেয়ে - প্লেন এ লোক জন এরকম ঠাসাঠাসি করে বসে? এই রকম শক্ত পাঁউরুটি আর ঠান্ডা চিকেন খায় ? এই রকম খাড়া হয়ে বসে বসে আট দশ ঘন্টা যেতে পারে মানুষ ? নিশ্চই পারে আর আমিও পারলাম !! পূর্ণ মূষিক ভব:!!

সেই থেকে আজ পর্যন্ত অনেক বার অনেক আগে গেছি, শেষ মুহূর্তে গেছি, অনেক প্রার্থনা করে গেছি, বলেছি ঠাকুর আর একটা ইকোনমি ওভারবুকিং পাইয়ে দাও, কিন্তু ভবি ভোলে নি। কি জানি হয়তো আমি ঠিক ঠাকুর কে ধরতে পারিনি? আচ্ছা এই এয়ারলাইন্স এর বুকিং আর সিটিং তা কে দেখেন জানেন? জানতে পারলে একটু জানাবেন ? আমার আমার ডিসেম্বর নাগাদ একটু লং জার্নি আছে কিনা, দেখতাম আর একবার চেষ্টা করে !!!

x

Monday, March 26, 2018

Disney or no Disney, drivers are a problem!!

তখন সদ্য এসেছি এদেশে। সাল তা ২০০৮।  গাড়ি চালাবার লাইসেন্স নেই কিন্তু Disney যাবার সখ হলো. তা কি আর করা যায় , উঠলো বাই তো কটক যাই।  দুরত্ব নেহাত কম নয় - আমাদের আটলান্টা র বাড়ি থেকে Orlando প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার হবে।  আমার একটি learner লাইসেন্স আছে তখন আর সেটা নিয়ে তো একলা গাড়ি চালানো যাবে না. তাহলে উপায়?

আমার এক বন্ধু (জুনিয়র বলা যায় ) তখন থাকে Pittsburgh এ।  সে বলল যাবে আর আটলান্টা র আর এক জন অফিস এর পরিবার যোগাড় হলো। তাহলে সাকুল্যে ৮ জন লোক , একটি গাড়ি, আর সবচেয়ে ইম্পর্টান্ট, দেড় খানা ড্রাইভার।  তা দেড় খানা কেন? 

আসলে আমার তো learner লাইসেন্স তাই একা গাড়ি চালাতে পারব না একজন লাইসেন্স ধারী থাকতে হবে. কিন্তু আমাদের আরেকজন ড্রাইভার আরো সরেস তার কোনো এদেশের লাইসেন্স ই নেই. সে ইন্ডিয়া র লাইসেন্স নিয়ে দিব্বি গাড়ি চালাচ্ছে। আসলে লাইসেন্স টা  ইংলিশ এ হলে এদেশে এক বছর গাড়ি চালাতে দেয় বেশিরভাগ স্টেট এ।  কিন্তু বিদেশী লাইসেন্স ধারী রা কি এদেশী learner লাইসেন্স ধারী র পথ প্রদর্শক হতে পারে? সে কূট প্রশ্নের মিমাংসা না করেই প্লান করা গেল !!

যাই হোক অফিস থেকে পার্ক এর টিকেট কাটা হলো - ইউনিভার্সাল Orlando এর একটা পার্ক আর ম্যাজিক কিংডম। কিন্তু ডিসিশন তা দেরিতে নেওয়া হয়েছিল বলে টিকেট তা আর বাড়িতে এলো না. আমাদের বলল ওদের Orlando কাউন্টার থেকে কালেক্ট করে নিতে। আমরা স্টার্ট করলামবৃহস্পতিবার , শুক্রবার ছিল চৌঠা জুলাই , আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস। তাই বৃহস্পতিবার না পিক আপ করলে সেই শনিবার এর বারবেলা - শুক্রবার এর প্লান চৌপাট।

যাই হোক দুগ্গা দুগ্গা বলে তো সুরু করা গেলো।  তখন জিপিএস খুব পপুলার নয় আর আমাদের তা ছিলও না. তাই নানা ওয়েবসাইট থেকে ম্যাপ এর প্রিন্ট আউট নিয়ে যাত্রা সুরু করা গেল. আমাদের সময় লাগার কথা সকাল ৯ টা নাগাদ।  কিন্তু বাঙালী র টাইম তো বেরোতে বেরোতে প্রায় সাড়ে দশটা হয়ে গেল।  এদিকে সময় লাগবে প্রায় ৮ ঘন্টা (ড্রাইভিং টাইম আর ব্রেক নিয়ে ). টিকেট কালেক্ট করতে না পারলে তো সাড়ে সর্বনাশ।  পরের দিন এর টিকেট তা তো যাবেই আবার নতুন করে টিকেট কিনতে হবে..

যাই হোক, দুগ্গা দুগ্গা বলে তো শুরু করা গেল. আমাদের আমাদের আটলান্টা র বাড়ি থেকে বেরিয়ে খুব কাছেই highway ৭৫ এর ramp. কিছু টা যাবার পরে ৭৫ টা আটলান্টা ডাউনটাউন এর মধ্যে দিয়ে  যায়।  আর সাধারণত হাইওয়ে  র সব চেয়ে ডান দিকের লেন টা exit ramp হয় (বন্ধুগন  মনে রাখতে  হবে আমেরিকা  তে গাড়ি র লেফট হ্যান্ড ড্রাইভ আর চলে রাস্তার  ডান দিক  দিয়ে ). এবার কিছু ক্ষেত্রে দুটো  লেন ও exit ramp হয়।  তা আমরা  সেটা অতটা খেয়াল করিনি আর যতটা সম্ভব right লেন তা ছেড়ে চালাচ্ছিলাম। আসলে সকলে বলে  দিয়েছিলো যে হাইওয়ে তে তিনটা লেন থাকলে সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে মাঝের লেন তা. সবচেয়ে বাঁ দিকের লেন টা হচ্ছে পাসিং  লেন (বাংলায় যাকে  বলে ওভারটেকিং লেন !!). তা এইবার হয়েছে কি, একটা এক্সিট এ দুটো লেন exit ramp ছিল আর যা হয়  আর কি, ধর ধর বলতে বলতে চোর পালাবার মতো, বুঝতে বুঝতে আমরা তো downtown এর কাছে exit নিয়ে ফেললাম! বোঝো এবার কি হবে? তা এই প্রশ্ন আজকের দিনে শুনতে অবাক লাগলেও, সেই জিপিএস ছাড়া সময়ে, আমাদের  মতো নতুন  ড্রাইভারদের কাছে খুব ই আতঙ্কের আর গোলমেলে ছিল. হাতে  তো  আছে প্রিন্টেড ম্যাপ  কিন্তু  তাতে তো আমাদের  বাড়ি থেকে orlando র হোটেল রাস্তা দেখানো  আছে।  মাঝখানে এই  সব অজানা প্রশ্নের  কোনো সমাধান নেই আরকি !! আজকের  জিপিএস এর যুগে এটা কোনো  সমস্যা ই নয়।  যেখানেই যাও জিপিএস এর হাত থেকে পালাবার উপায় নেই  - ঠিক ঘাড় ধরে সোজা রাস্তায় নিয়ে আসবে !! (আমার তো মনে হয় মাঝে মাঝে একটু যেন রাগ রাগ গলায় ধমক ও দেয় বার বার  রাস্তা ভুল করলে !!).

যাইহোক , এখন যে প্রশ্ন  তা সবচেয়ে বোরো হয়ে দেখা দিলো, সেটা হলো অত কিম:?? এবার কি করা? তা বেশ কিছু গুণী লোককে ফোন করে একটা ভালো সাজেশন পাওয়া গেলো। আমাদের কাছে laptop ছিল - তা Starbucks এ গিয়ে (ওখানে wifi থাকে ) ইন্টারনেট এ কানেক্ট করে  আবার একটা ম্যাপ নেওয়া যেতে পারে - কিন্তু তাতেও তো সমস্যা - Starbucks পেতে গেলেও তো ম্যাপ লাগে, তাহলে? এতো সেই ডিম্  আগে  নাকি মুরগি  আগে সমস্যা!!

তা যাই হোক বলতে বলতে একটামল  দেখা গেলো আর একটা Macy's ও।  ভাবা হলো যে ওখানে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করা যাক। যা দেখলাম একজন কাউন্টার এ বসে আছে - দেখে মনে হলো আমাদের দেশীয় হবে (এদেশে অবশ্য পুরো উপমহাদেশ এর লোককেই আমরা দেশী বলি!!). তা সেখানে গিয়ে যথাসাধ্য ব্যাপারটা বোঝানো হলো। সেকি বুঝলো কে জানে। সে তো 'দাদা সামনে গিয়ে বাঁ দিক তারপর ডানদিক, আর শেষে আবার বাঁ দিক" গোছের একটা ডিরেকশন দিলো।  যেটুকু বোঝা গেলো মাথাটাথা নেড়ে তো আবার গাড়িতে এসে বসলাম।  কনফিডেন্স একটু কম হলেও সেটা দেখলে তো চলবে না!!

যাই হোক এদিক ওদিক করে তো আবার highway তে ওঠা গেলো। বেশ একটা অ্যাচিভমেন্ট এর ভাব।  কিন্তু একটু পরেই আবার খটকা লাগলো।  রাস্তা যেন চেনা চেনা লাগছে !! দেখে যেন মনে হয় চিনি তাহারে? কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? এখানে তো সাত জন্মে কোনোদিন আসিনি, পর্বপুরুষ ও কেউ এ জন্মে আসে নি? তাহলে? কিন্তু সেই রহস্য উদ্ধার হলো খুব তাড়াতাড়ি।  কিভাবে? খটকা  লাগাতে আমরা একটা এক্সিট এ একটা Enterprise এর দেখতে পেয়ে বেরোলাম।  গাড়িতে এন্টারপ্রাইস এর ই ছিল কিনা!

সমস্যা তা কি বোঝালাম। ....আর, উত্তর শুনে চক্ষু চড়কগাছ !! আমরা ৭৫ সাউথ এর বদলে ৭৫ নর্থ নিয়েছি আর মনের আনন্দে আবার বাড়ির দিকেই যাচ্ছিলাম!! অসাধারণ , অভূতপূর্ব , বাঙালি কোথায় গেলো তোমার গর্বের বুদ্ধি!!!! আমাদের দেখে আর আমাদের মুখগুলো দেখে বুঝতেই পারলো সদ্য আসা বুরবক এর দল।  যাই হোক বলে দিলো কি করতে হবে..আর বললো আমরা কি একটা জিপিএস চাই? তখন আমাদের মাথায় এলো 'তাইতো, এটা তো ভালো আইডিয়া'। কিন্তু পরমুহূর্তে তারা যা বললো তাতে মনে হলো থাক বাবা - আসলে তারা বললো যে ওদের এই অফিস এ নেই কিন্তু আমি যদি এয়ারপোর্ট এর এন্টারপ্রাইস যাই তাহলে জিপিএস পেতে পারি। কিন্তু আবার !!! আবার যদি জিপিএস খুঁজতে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে যাই। তার চেয়ে থাক - দেখানো রাস্তা দিয়ে আবার স্টার্ট করি।

তাই আবার ৭৫ সাউথ দিয়ে চললাম।  অনেকটা রাস্তা কেঁচে গণ্ডুষ করতে হলো কিন্তু বোঝা গেলো এবার ঠিক ই পৌঁছাবো। Macy র লোকটাকে অনেক গালি ও দেওয়া হলো যা হোক!!

যাইহোক চলতে লাগলাম। অনেকটা রাস্তা চলতে হবে আর কিছু টা সময় ও মেকআপ করতে হবে তাই মোটামুটি জোরেই চলতে লাগলাম। কিন্তু প্রায় দুঘন্টা এভাবে নষ্ট হয়েছে , আর তাছাড়া ড্রাইভার রাও  তেমন চৌখস নয় , তাই খুব একটা ভরসা পাওয়া গেলো না ঠিক সময়ে পৌঁছানো যাবে তা বলে। ছোটোখাটো কিছু ঘটনা  ছাড়া, যেমন মাঝে অনেকটা রাস্তা ঝুম বৃষ্টি নামলো , লোকজন এর অনেকবার বাথরুম এ যেতে হল, মোটামুটি নির্ঝঞ্ঝাট এই পৌঁছানো গেল অর্ল্যান্ডো তে।

কিন্তু এতটা পড়ে যদি ভাবছেন আমার গল্প ফুরালো নটে গাছটি মুড়ালো , তাহলে আরও কিছু চমক বাকি ছিল। ওই যে বলে কাহানি মে টুইস্ট বা পিকচার অভি বাকি হ্যায় দোস্ত ।

অরলান্ড তো পৌঁছানো গেলো কিন্তু এবার টিকিট কালেক্ট করতে হবে কোন একটা স্টোরের থেকে । সেই address আর খুঁজে পাওয়া যায় না । মহা মুশকিল হলো - পরদিন ৪ঠা জুলাই  সব বন্ধ তাহলে আমরা আবার নতুন করে টিকিট কেটে ঢুকবো ? সদ্য  দেশ থেকে আসা বাঙালির দল, ডলার আর টাকার conversion করে ভিরমি খেতে হবে যে।

যাইহোক অনেক খোঁজাখুঁজি চক্কর  কাটার পর পৌঁছানো গেলো সেই দোকানের সামনে আর সবকিছুর মাধুরেন সমাপয়েৎ তো? না দাদা সে গুড়ে বালি । গাড়ি থেকে নেমে দোকানের সামনে গিয়ে দেখলাম সুন্দর করে দোকান বন্ধ করা।  আবার কাহানি মেই টুইস্ট, বাড়ি , থুড়ি  হোটেল এ চলে এলাম? না তা নয় । পিকচার সামান্য একটু বাকি ছিল । আমরা যখন বিফল মনোরথ হয়ে ফায়ার আসছি , হঠাৎ দেখি দোকানের মধ্যে একটি লোক সব আলো টালো নেভাচ্ছে । আর যাই কোথায়? অনেক অঙ্গভঙ্গি করে (আমাদের চেঁচানি শুনতে পাচ্ছিলো না কিনা, দোকান বন্ধ বলে, নাহলে পুরো অর্ল্যান্ডো শুনতে পেয়েছে অসহায় বাঙালি দেড় আর্তনাদ !!) তার মনোযোগ আকর্ষণ করা গেলো কিন্তু সে আমাদের গলা কাটতে  চাইলো কি? না আসলে এদেশে হাত দিয়ে গলা কাটার ভঙ্গি করে অনেকে বোঝায় যে আমরা বন্ধ বা আমাদের হয়ে গেছে (we are done!!). কিন্তু আমরাও নাছোড়  বান্দা । অগত্যা  সে এসে দরজা  খুলে আমাদের টিকিট  গুলো হস্তান্তর  করে তবে ছাড়া পেলো। আসলে সেগুলো সামনেই ছিল কারণ আমরা পুরো রাস্তা ধারাবিবরণী দিতে দিতে এসেছিলাম ওদের যে আমরা একটু দেরি  হলেও store closing এর মধ্যে নিশ্চই যাবো ।

তারপর টিকিট নিয়ে হোটেলে ফেরা - রেস্ট নিয়ে পরের দু দিন disney আর universal studios এর পার্ক দর্শন । তারপর কি হলো? সে এক অন্য গল্প !!




First class flight, yeh dil maange more!! Bollei holo??

উপেন্দ্র বললো "কি রে , হিন্দু মিল কি তোর না হলেই নয় ?" তা এই মাঝরাতে এই কূট প্রশ্নের জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।  একি ভনিতা! ...